Thursday, December 12, 2013

বাকুমান (Bakuman) মাঙ্গা/আনিমে রিভিউ

বাকুমান মাঙ্গা পড়া এবং আনিমে দেখা, দুই ধরণের অভিজ্ঞতা হওয়ার পরেই রিভিউ লিখছি। কিছুটা পার্শিয়াল হতে পারি, আমার প্রথম পড়া স্লাইস অফ লাইফ। এবং সম্ভবত প্রথম আনিমে, যেটার মাঙ্গা পড়া থাকার পরেও অনেক আগ্রহ নিয়ে আমি আনিমেটা দেখেছি। এবং সত্যি বলতে এরকম মাঙ্গা আর হওয়া সম্ভব বলেই আমার মনে হয় না। পড়া শুরু করেছিলাম শুধুমাত্র এই কারণে যে বাকুমানের লেখক-আর্টিস্ট হচ্ছেন ডেথ নোটের লেখক-আর্টিস্ট সুগুমি ওহবা, তাকেশি ওবাতা। ডেথ নোটের কারণেই হয়তো অন্য কিছু আশা করে গেছিলাম। গিয়ে পেয়েছি পুরোপুরি অন্যরকম এক জিনিস। যাই হোক শুরু করি।
মরিতাকা মাশিরো আপাতদৃষ্টিতে একজন সাধারণ জাপানিজ মিডল স্কুল ছাত্র। সে একসময় খুব ভালো ছবি আঁকাতো, হতে চাইতো তার চাচা, মাঙ্গাকা নবুহিরো মরিতাকার মত। কিন্তু চাচার মৃত্যুর পর বড্ড বেশি উদাসীন হয়ে পড়ে সে। তার বাবা-মা ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা সম্বন্ধে জানতে চাইলে কিছু বলতে পারে না, নিজের মত করে কোন স্বপ্ন দেখতে পারে না, পারে না আজুকি মিহো, যাকে অনেকদিন ধরে পছন্দ করে সে, তার সাথে গিয়ে কথা বলতে।
এই অবস্থায় হঠাৎ করেই তাকে অ্যাপ্রোচ করে ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্র তাকাগি আকিতো। জানায় তার স্বপ্নের কথা, সে হতে চায় জাপানের সবচেয়ে বড় মাঙ্গাকা। সে চায় মাশিরো তার লেখা গল্পের সাথে ছবি আঁকাক। মাশিরোকে কনভিন্স করানর জন্য সে তাকে নিয়ে যায় আজকি মিহো’র বাসায়। সেখানের কথোপকথন থেকেই মাশিরো আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করে, যে স্বপ্ন জড়িয়ে যায় আজুকি আর তাকাগির সাথে। বাকুমানের বাকি কাহিনী তাদের স্বপ্নপূরণের কাহিনী।
bakuman-349320
সামারি দেওয়া শেষ, এবার রিভিউ:
বাকুমানের ক্যারেক্টারাইজেশন বেশ ইন্টারেস্টিং। প্রধান দুই প্রোটাগোনিস্টের চরিত্র শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুবই ভালোভাবে ডেভেলপড হয়েছে। তাকাগি’র লেখার স্টাইল, মাশিরোর আঁকার স্কিল, মোটকথা তাদের মাঙ্গার ধরণ নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের সাথে সাথেই যেন তারা নিজেদের জীবন নিয়েও এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকে।
এর প্যারালালি চলতে থাকে মাশিরো আর আজুকির প্রেমকাহিনী। এটা সম্বন্ধে আমি এতটুকুই বলব, বাকুমান পড়া/দেখার সময় একটা সময় গিয়ে এরকম একটা সম্পর্ক থাকার কথা আপনি নিজে চিন্তা করবেন না তা সম্ভবই না।
এবং তার সাথে আরেকটা যে সম্পর্কের কথা না বললেই না তা হল মাশিরো-তাকাগির সাথে, তাদের রাইভাল, নিজুমা এইজির সম্পর্কে। নিজুমা এইজি সম্ভবত বাকুমানের সবচেয়ে ‘রঙচঙে’ ক্যারেক্টার। পুরো সিরিজ জুড়েই যখনই প্যানেলে এইজি থাকে, মনোযোগ তার দিকে যেতে বাধ্য। ওয়ান পিস ফ্যানদের উদ্দেশ্যে বলছি, এইজির চরিত্র অনেকটাই ওয়ান পিসের মাঙ্গাকা এইচিরো ওদার কথা ভেবে লেখা। যাইহোক বাকুমান, সবকিছুর পরেও একটা শৌনেন মাঙ্গা। সুতরাং, এটাতে লড়াই থাকবেই। কিন্তু টিপিক্যাল শৌনেন লড়াই থেকে এখানকার সব লড়াইও অন্যরকম, প্রতিপক্ষরাও সবাই, শুধু এইজি না, অন্যরকম। এবং ‘Rivalry’ শব্দটা এত সুন্দরভাবে ডিফাইনড হতে আর কোন মাঙ্গা/আনিমেতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
বাকুমানের সাপোর্টিং কাস্ট খুবই ভালো, শুধুমাত্র মূল চরিত্রগুলো না। সাইড ক্যারেক্টার হিসেবে এসে ফুকুদা শিনতা বা আওকি কো যদি আপনার প্রিয় চরিত্র হয়ে যায়, তাও আসলে কিছু বলার নাই। বাকুমানের ব্যাপারে একটা অভিযোগ আসে যে এর নারী চরিত্রগুলো সেভাবে ডেভেলপড না। প্রথম দিকে কখনো কখনো এটা মনে হলেও পরের দিকে গিয়ে এটা মোটামোটি কাটিয়ে ওঠেন ওহবা সেনসেই।
ক্যারেক্টারাইজেশন নিয়ে অনেক কথা হয়ে গেছে। গল্প নিয়ে একটু বলি। মনে হতে পারে দুজন উঠতি মাঙ্গাকার জীবনে কি এমন ঘটতে পারে যা নিয়ে মাঙ্গাই লিখে ফেলা সম্ভব। বাস্তব-অবাস্তব সব ধরণের সিনারিও মিলিয়ে পুরো গল্পটা আসলেই অনেক অসাধারণ। আর আগে যেরকম বললাম, শৌনেন মাঙ্গার লড়াই সম্বন্ধে আপনার আইডিয়াটাই পরিবর্তিত হয়ে যাবে বাকুমানের পর। তারপর, ডেথ নোটের আর এটার মাঙ্গাকা একই শুনে যারা ভাবছেন, তাহলে নিশ্চয়ই খুব গম্ভীর ধরণের সেটাপ হবে, হাসির এলিমেন্ট থাকবে না, তারাও ভুল করছেন। বাকুমান স্টোরির সেটাপ, ডায়ালোগ, ক্যারেক্টার বিহেভিয়ার সব কিছু মিলিয়েই প্রচণ্ড হাস্যরসাত্মক একটি মাঙ্গা, গ্যাগ মাঙ্গা না হয়েও।
যাই হোক, শেষ কথা হচ্ছে: কখনো যদি আপনি লিখালিখি বা এ ধরণের কিছুর জন্য কলম হাতে নিয়ে থাকেন, ছবি আঁকা যদি আপনার প্যাশন হয়ে থাকে, যদি মারত্মক উচ্চাভিলাষী কোন স্বপ্ন থেকে থাকে আপনার, অথবা আপনি যদি এখনও ভীষণ রোমান্টিক কোন আইডিয়া নিয়ে বসে থাকেন, বাকুমান আপনার ভাল্লাগবেই।
এবং নিশ্চিত ভাবেই প্রকৃত মাঙ্গাকাদের জন্য, মাঙ্গা/আনিমের সাথে জড়িত সবার জন্য একটা অন্যরকমের সম্মান তৈরি হয়ে যাবে।
রেটিং:
মাঙ্গা: MyAnimeList rating: 8.54, আমার রেটিং: 9
আনিমে: MyAnimeList: 8.36, আমার রেটিং 8
Bakuman。.full.1225692