এবারের টার্মব্রেকে বান্দরবান যাব এটা যে কবে থেকে মাথায়
আছে আমার নিজেরও এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। বান্দরবানের আইডিয়া প্রথম আসে তানভীর-শিবলু’র মাথায়, তা সেও তো সেই কবেকার
কথা। প্ল্যানও মোটামোটি ওদেরই করা। আমাদের যখন বলেছিল
আমাদেরও তো এই ট্যুরে না বলার কোন কারণ নাই। এদিক সেদিকে দেখি সবাই
রাজি। সেটাও পরীক্ষা শুরুর আগের কথা। তো আমরা পরীক্ষা শেষেই দৌড় দিব এই হল ডিসিশন।
সেই পরীক্ষাই শেষ হওয়া তো দূরের কথা শুরুই হয় না। আমাদেরও আর সব ছেড়ে-ছুঁড়ে দৌড়
দেওয়া হয় না। যাই হোক শেষ পর্যন্ত শেষ হল ১৮ তারিখে আর আমরাও ঐদিন বিকাল-সন্ধ্যা
মিলিয়ে কিভাবে কিভাবে যেন বান্দরবান ট্যুরের প্রিপারেশন শেষ করলাম। মানে
প্রিপারেশন বলতে আমরা যা বুঝছিলাম আর কি। আমাদের মধ্যে কাউরো কাউরো আবার ব্লগ,
সিনিয়র ইত্যাদি মিলিয়ে প্রিপারেশন সম্বন্ধে অগাধ জ্ঞান হয়ে গেছিল। কেউ বলে ওডোমস
নিতে ভুলিস না, আবার কেউবা বলে, আর যে যাই করুক আমি সানব্লক-সানস্ক্রিন ছাড়া
নড়ছি না।
যাই হোক, সব শেষ করে ১৮
তারিখ রাত ১০টার কিছু আগে হাঁটা দিলাম ১২ জন মিলে কমলাপুর স্টেশনের দিকে। (এ বেলায়
১২ জন কে কে বলে নেওয়া যাক। আমি, শিবলু, তানভীর, এমডি, তাজিন, স্বর্নাভ, শিফু,
রাচি, শাকির, নির্ঝর, সাফাত, এইচ। এই ১২ জনের কারও কারও আবার বিভিন্ন সময়ে বিপত্তি
ছিল, তাজিনের স্কুলের রিইউনিয়নের সাথে সময় ক্ল্যাশ করছিল তাই সে মিস করছিল, পরে
পরীক্ষা আর তার ফলে যাত্রাশুরু পিছানোতে বরং ভালোই হইসে আর কি। আর আমাদের ট্যুর
শুরুর ঠিক আগে আগে শাকিরের ভাই অসুস্থ হল। সেটা নিয়ে ওর যাওয়া আবার অনিশ্চিত হয়ে
পড়ে। শেষে ভাইয়ের অবস্থা ভালোর দিকে যাওয়াতে শাকিরের যাওয়া নিশ্চিত হয়, আর উলটা
পরীক্ষার ঠিক পরে যাওয়া ক্যান্সেল করে দেয় বাদুড় আকিব। বাকিরা বরাবরই কন্সট্যান্ট।) ট্রেন
চট্টগ্রামের, (এটা বলতেই আরেকটা জিনিস মনে পড়ল, শুধু এই জার্নিটা,
মানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, আকিব না থাকা সত্যেও আমরা আসলে ১৩ জনই ছিলাম,
চট্টগ্রামেরই হামু একই ট্রেন বাড়ি যাওয়ার জন্য বেছে নেওয়ায়),
ছাড়ার কথা ১১টা ৩০ এ। চট্টগ্রাম থেকে সকালে বাসে করে যাব বান্দরবান বলে প্ল্যান। তো ট্রেন আর
সময়মত ছাড়ে না। এরই মধ্যে ঘটল বিপত্তি। স্টেশনে হকারের কাছে জিঞ্জার(যারা এ
বস্তুটা চিনে না তাদেরকে দুর্ভাগা বলতেই হয়) দেখে সিফাত, আমার, শিবলুর কেনার শখ
হল। কেনা হলও। তারপর আসার সময় হকার বলে টাকা নাকি দেওয়া হয় নাই। লেকু আর কাকে বলে।
এদিকে শিফুর আবার মনে আছে সে টাকা দিয়েছে। তো এই নিয়েই ঝগড়া বাধার যোগাড়। আমরাও
কেউ আবার শিফুর টাকা দেবার সময় দেখি নাই। যাই হোক একদম শুরুতেই ঝগড়া দিয়ে ট্যুর
শুরু করার ইচ্ছা কারোই ছিল না, তাও আবার ২০টা টাকার জন্য। ওদিকে দেখলাম স্বঘোষিত
নব্য খিটমিটে আবুলও(এখানে বলে রাখি যাহাই শিবলু তাহাই আবুল, বাকি যাত্রাবিবরণীতে এ
দুটো সমার্থক ভাবে ব্যবহৃত হবে) দেখলাম উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। তো টাকাটা দিয়ে ঝামেলা
মিটিয়ে ফেলা হল আর কি। মজার ব্যাপার হল এই একই লোকের কাছ থেকে আমরা ট্রেনে পরে
আবার চিপস না কি যেন কিনেছিলাম। এইবারে চিপস কিনা থেকে শুরু করে টাকা দেওয়া-ফেরত
নেওয়া পুরো সময়টা যেভাবে বারো জোড়া গম্ভীর চোখ ঐদিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে ছিল সেটা
মনে পড়েই এখন হাসি পাচ্ছে। (আমরা প্রত্যেকবারই যখন একবার করে কোন না কোন
ট্রান্সপোর্টে চড়েছি একগাদা খাওয়ার জিনিসপাতি কিনে ফেলেছি, আমরা বলতে আমাদের যাদের
ব্যাগ খাবার-বিবর্জিত ছিল আর কি। এর বড় একটা ব্যতিক্রম ছিল স্বর্নাভ, তার আপুর
কল্যাণে তার ব্যাগে কি কি যে ছিল সে নিজেও মনে হয় পুরোপুরি জানত না। সেই খাবার-দাবার
ট্যুরের অনেকটা সময় পর্যন্ত টিকেছিল। তবে খিদের মাথায় যে কতবার স্বর্নাভের ব্যাগের
শরনাপন্ন হয়েছি আর স্বর্নাভের আপুর প্রতি কৃতজ্ঞতায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি সেটা পরের
ব্যাপার।)
যাই হোক,
সবকিছুর শেষে গিয়ে ট্রেন চলা শুরু করল। বসলাম ধীরে সুস্থে সবাই একটা একটা করে
জায়গা বেছে নিয়ে। কম্পার্টমেন্টের একদম এক কোণার সিটগুলো ছিল আমাদের। আর একদম শেষ
মাথায় বাথরুমের পাশের সিটটা ফাঁকাই থেকে গেল। পরে এসে লোকজন বসেছিল যদিও, বসার
আগ পর্যন্ত ঠিকই সিটটা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল যে বাদুড় আকিব মিসিং।